শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ০১:০২ পূর্বাহ্ন

মুহাম্মাদ সা. সর্বশ্রেষ্ঠ ইনসাফকারী ও শান্তিকামী

সত্য-ন্যায়, আদল-ইনসাফের এক মূর্ত প্রতীক ছিলেন মুহাম্মাদ ﷺ। তাঁর জীবনের প্রতিটি পরতে ফুটে আছে ন্যায় ও ইনসাফের প্রদীপ্ত সূর্যটি।

তিনি ন্যায়-ইনসাফের সূর্যটিকে জীবনের প্রত্যেকটা মূহুর্তে বাস্তবে প্রদর্শন করে গেছেন। এককথায় একেবারে সেই শিশুকাল থেকেই আমাদের প্রিয় মুহাম্মাদ ﷺ ছিলেন ইনসাফকারী। শান্তিকামী। অন্যের অধিকারের ব্যাপারে ছিলেন সদা তৎপর।

 

আমাদের প্রিয় মুহাম্মাদ ﷺ শৈশব-কৈশোর এবং শিশুকালেও ছিলেন ইনসাফকারী। শান্তিকামী। অন্যের অধিকারের ব্যাপারে ছিলেন সদা তৎপর। আমরা জানি, তিনি যখন দুগ্ধ পান করার বয়সী শিশু ছিলেন, সে সময়েও কিন্তু তিনি একটি থেকে পান করতেন। অন্যটি তাঁর দুধ ভাইয়ের জন্য রেখে দিতেন। কখনো জোর করেও তাঁকে অন্যটি থেকে খাওয়ানো যায় নি। যখন বড়ো হলেন একটু, তখন দেখলেন তাঁদের সমাজের রাহাজানি, বেহায়াপনা। গোত্রে গোত্রে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ-সংঘাত। তিনি সে সময়েই তাঁর সমাজের সেসব অসংগতি নিয়ে ভাবতেন। ভাবতেন, তাদেরকে এসব অধঃপতন থেকে কীভাবে রক্ষা করা যায়! সে কারণে তিনি তাঁর সমচিন্তার লোকজনকে সাথে নিয়ে গড়ে তুললেন “হিলফুল ফুযুল” নামক একটি শান্তিসংঘ। সে সংঘটি দুর্বলদের নিরাপত্তা বিধান করার কাজে ছিলো যথেষ্ট সচেতন। মানুষকে গোত্রে গোত্রে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধসমূহ থেকে নিবৃত করতে দুর্দান্ত ভূমিকা পালন করেছিলো। ইতিহাস যার সাক্ষী।

 

মদিনাতুল মুনাওয়ারায় গিয়ে যখন রাষ্ট্রনায়ক হলেন, তখনও তিনি মুসলিম-মুশরিক-ইহুদি— সবারই ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেছেন। তিনি কতোটা মানবিক, কতোটা ন্যায়নিষ্ঠ ছিলো, তা তাঁর সংখ্যালঘু অমুসলিমদের অধিকার নিয়ে দেওয়া এই ঘোষণা থেকেই বুঝা যায়, তিনি উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা দিয়ে বলেছেন—‘‘ যদি কোনো মুসলিম কোনো অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে তার অধিকার খর্ব করে, তার ক্ষমতার বাইরে কষ্ট দেয় এবং তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক নিয়ে যায়, তাহলে কিয়ামতের দিন আমি তার পক্ষে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ উত্থাপন করব।’ [আবু দাঊদ : ৩০৫২] আদল-ইনসাফের ক্ষেত্রে তিনি কতোটা আপোষহীন ছিলো তাফসীরে ইবনে কাসীরের সুরা নিসার ৬৫ নং আয়াতের তাফসীরের একটি বর্ণনায় তা আরো সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেটা হলো, একবার একটা বিচার এসেছে রাসুলুল্লাহ ﷺ এর কাছে। এক নামধারী মুসলিম ও অমুসলিমের । নবিজি সব কিছু শুনে-পর্যবেক্ষণ করে বিচারের রায় দিলেন। বিচারে হেরে গেলো মুসলিম ব্যক্তিটি । ন্যায় বিচার পেয়ে অমুসলিম ব্যক্তি দারুণ উৎফুল্ল। খুবই খুশি। খুশি হলো না মুনাফিকটি। সে বিচারটার পুনরায় ফায়সালার জন্যে আবু বকর রাদিআল্লাহু আনহুর কাছে যায়। তিনি তাদের কথাবার্তা শুনে জিজ্ঞেস করলেন প্রথম বিচার কে করেছে? মুনাফিকটা বললো মুহাম্মদ ﷺ ।

 

আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতচকিত হয়ে ওঠলো! কলিজায় কাঁপন ধরার মতোন অবস্থা তাঁর। তিনি বললো এটা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। তোমরা চলে যাও। নবিজি যদি রায় দিয়ে থাকেন, তাহলে তিনি সঠিক আর ন্যায্য রায়-ই দিয়েছে। যেখানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ন্যায় বিচারক তিনি, যিনি এসেছেন সাম্য-ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে, তারচে’ বেশি ইনসাফ করতে পারে এমন আর আছে কে তাবৎ দুনিয়ায়?
মুনাফিকটি আশাহত হলো। সে বিষন্ন মন আর ভগ্নহৃদয় নিয়ে চলে গেলো ওমর রাদিআল্লাহু আনহুর কাছে। ওমর রাদিআল্লাহু আনহু জানতে চাইলো তাহলে প্রথম বিচার কে করেছে?
-মুনাফিক বললো, মুহাম্মদ ﷺ করেছেন।
-ওমর রাদিআল্লাহু আনহু জানতে চাইলো তাহলে মুহাম্মদ ﷺ এর বিচার কি তোমার পছন্দ হয় নি?
-মুনাফিক জবাব দিলো, নাহ! আমি মুসলিম তিনি আমার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। অতঃপর সে সাঈয়িদুনা ওমরের কাছে ফায়সালা চাইলো।
-ওমর রাদিআল্লাহু আনহু বললো তাহলে দাঁড়াও। আমি ফায়সালা করতে হলে ভেতরে যাওয়া লাগবে। ভেতর হতে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু একটা খোলা তলোয়ার নিয়ে আসলো। আর বললো, বিশ্বনবি ﷺ এর সীদ্ধান্ত যার পছন্দ হয় না, তার ফায়সালা আমি এভাবেই করি—বলেই মুনাফিকটার গর্দান আলাদা করে ফেললো!
ঘটনাটা আবার ভিন্ন আঙ্গিকেও বর্ণিত হয়েছে। তা হলো, মিমাংসার জন্য সে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ ﷺ এর কাছে দাবি করলো তাদের যেনো ওমর রাদিআল্লাহু আনহুর কাছে পাঠানো হয়। নবিজি ﷺ বলেন যাও তাহলে। সেখানে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু সব শুনে ওই কাজটা করলো, মানে তলোয়ার দিয়ে তার মাথা দ্বিখণ্ডিত করে ফেললো। এটা দেখে অপর ব্যক্তি সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনা থেকে তো স্পষ্ট-ই বুঝা যায় যে, সত্য-ন্যায়-ইনসাফ করতে হলে যদি নিজ দলের, নিজ অনুসারীর বিপক্ষেও যাওয়া লাগে, তাহলে প্রিয় নবি মুহাম্মাদ ﷺ তা-ই করতেন। শুধুই ইনসাফের জন্য। শান্তির জন্য। হুদাইবিয়ার সন্ধির কথা-ই ধরুন, সে সন্ধির যে চুক্তিগুলো, সে চুক্তিগুলোর দিকে তাকান, এবং চুক্তি লিখতে তাঁর নাম থেকে “রাসুলুল্লাহ” শব্দটি কেটে দেওয়ার জন্য মুশরিকদের যে অমূলক-অনভিপ্রেত দাবি, সে দাবি তিনি কী সহজেই না মেনে নিয়ে কেটে দিয়েছেন। এই নাম কাটতে সন্ধি লেখক আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কোনো ক্রমেই রাজি ছিলো না। তিনিই তখন শান্তির প্রত্যাশায় এই উদারতা প্রদর্শন করলেন। আলীকে বললেন, “মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” কোথায় লেখা আছে, তা আমাকে দেখিয়ে দাও। অতঃপর নবিজির পীড়াপীড়িতে তিনি নবিজিকে তা দেখিয়ে দিলেন। আর নিজ

হাতেই তা কেটে দিলেন। সাথে এটাও বললেন — “তোমরা মানো বা না মানো তাতে কী! আল্লাহর কসম, আমি তাঁর প্রেরিত রাসুলই।” নিন্মে উল্লেখিত চুক্তির ধারাগুলোই প্রমান করে মুহাম্মাদ ﷺ কতোটা মানবিক ছিলেন। ছিলেন কতোটা সহনশীল ও শান্তিকামী। বাহ্যিক দৃষ্টিতে সাময়িক পরাজয় এবং কষ্টকে মেনে নিয়েও কীভাবে সংঘাতকে এড়িয়ে গিয়েছেন।

 

চুক্তির ধারাগুলো হলো-
১. মুসলমানরা এ বছর হজ্জ না করেই ফিরে যাবে।
২. তারা আগামী বছর আসবে এবং মাত্র তিন দিন থেকে চলে যাবে।
৩. কেউ অস্ত্র নিয়ে আসবে না। শুধু তলোয়ার সঙ্গে রাখতে পারবে; কিন্তু তা-ও কোষবদ্ধ থাকবে, বাইরে বের করা যাবে না।
৪. মক্কায় যেসকল মুসলমান অবশিষ্ট রয়েছে তাদের কাউকে সঙে নিয়ে যেতে পারবে না। আর কোনো মুসলমান মক্কায় ফিরে আসতে চাইলে তাকেও বাধা দেয়া যাবে না।
৫. মুসলিম বা অমুসলিমদের মধ্য থেকে কেউ মাদিনায় গেলে তাকে ফেরত পাঠাতে হবে; তবে কোনো মুসলমান মক্কায় গেলে তাকে ফেরত দেয়া হবে না।
৬. আরবের গোত্রসমূহ মুসলমান বা কাফির— যে কোনো পক্ষের সাথে সন্ধিচুক্তি সম্পাদন করতে পারবে।
৭. এ সন্ধি-চুক্তি দশ বছর বহাল থাকবে।

 

এভাবে বাহ্যিক দৃষ্টিতে পরাজিত-আত্মসমর্পিত সন্ধিপত্র যখন লিখিত হচ্ছিলো, ঠিক সেই মুহূর্তে হুট করেই আবু জান্দাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু মুশরিকদের নিষ্পেষণ থেকে পালিয়ে শেকড় পরা অবস্থায় সেস্থানে এসে হাজির হলেন। নির্মম নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন তাঁর দেহবায়বে ফুটে আছে। সবাই একদৃষ্টে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। তিনিও একে একে নিজের দুর্গতির কথা সকলকে শুনিয়ে যাচ্ছেন। ইসলাম গ্রহণের জন্যে কাফির-মুশরিকরা তাঁকে কী এবং কেমন শাস্তি দিচ্ছে— তার সবটুকুনই সবিস্তারে খুলে খুলে বলে যেতে লাগলেন। একপর্যায়ে তিনি নবিজির কাছে আবেদন জানিয়ে বললেন, ইয়া রাসুল্লাহ ﷺ। আমাকে কাফিরদের এই নিষ্ঠুর নির্যাতন থেকে মুক্ত করে আপনার সঙ্গে নিয়ে যান। একথা শুনে মুশরিক নেতৃবৃন্দ বলে ওঠলো, “দেখুন হে মুহাম্মাদ, সন্ধির শর্তসমূহ মেনে নেয়ার পর আপনারা তাকে নিয়ে যেতে পারেন না”।

 

কী এক হৃদয়বিদারক কঠিন মুহূর্ত আল্লাহর রাসুল এবং তাঁর সাহাবিদের সামনে, তা ভাবতেই শরীর শিউরে ওঠে। একদিকে মুশরিকদের সাথে চুক্তি অন্যদিকে আবু জান্দাল ইসলাম গ্রহণের অপরাধে (!) নির্মম নির্যাতন ভোগ করার যন্ত্রণাগুলো পেশ করে বারবার ফরিয়াদ। তিনি ফরিয়াদ জানিয়ে বলছিলেন; ‘‘হে মুসলিম ভাইগণ! তোমরা কি আমাকে আবার কাফিরদের ভয়াল ছোবলের মাঝে রেখে যেতে চাও?’’ সাহাবায়ে কিরাম এহেন পরিস্থতিতে অত্যন্ত অস্থির হয়ে পড়লো। সাঈয়িদুনা উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তো রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে বলেই ফেললেন যে— ‘আপনি যখন আল্লাহর সত্য নবি, ইসলাম যখন সত্য দ্বীন; তখন আমরা এমন অপমান কী জন্য সইবো? আল্লাহর রাসুল ﷺ তাঁকে বললেন; ‘আমি আল্লাহর পয়গাম্বর, তাঁর হুকুমের নাফরমানি আমি করতে পারি না। আল্লাহই আমাদেরকে সাহায্য করবেন।’ ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুসহ সাহাবায়ে আজমাইন কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। একদিকে ছিলো বাহ্যিকভাবে ইসলামের অবমাননা ও আবু জান্দালের শোচনীয় পরিস্থিতি, অপরদিকে ছিলো রাসুলে কারিম ﷺ -এর নিরঙ্কুশ আনুগত্যের প্রশ্ন।

 

রাসুল ﷺ আবু জান্দালকে বললেন; ‘‘ হে আবু জান্দাল! ধৈর্য ধারণ করো। আল্লাহ তোমার এবং অন্যান্য মজলুমদের জন্যে কোনো না কোনো পথ অবশ্যই বের করে দিবেন। সন্ধি-চুক্তি সম্পাদন হয়ে গেছে; অতএব আমরা তাদের সাথে বিশ্বাসভঙ করতে পারি না।’’

 

যেহেতু চুক্তি সম্পাদন হলো, সেহেতু সন্ধির শর্তানুযায়ী আবু জান্দালকে ফিরে যেতে হলো। আবু জান্দাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুও এভাবে ইসলামের পথে জান কুরবানকারীদের কাতারে নিজেকে শামিল করতে প্রস্তুত হয়ে গেলেন, উত্তীর্ণ হয়ে গেলেন রাসুলে কারিম ﷺ-এর আনুগত্যের এক দুর্দান্ত-দুঃসাহসিক কঠিন পরীক্ষায়। আল্লাহর রাসুলও শুধু শান্তির জন্য, মানবতার বৃহত্তর কল্যাণে নিজ আন্দোলনের স্বার্থগুলো, ভালোবাসাগুলো জলাঞ্জলি দিলেন। বৃহত্তর এক স্বার্থে ক্ষুদ্র কিছু স্বার্থ এবং দৃশ্যত কিছু পরাজয় নিজ হাতে বরণ করে নিলেন। আসহাবে রাসুলগণও সাময়িক সময়ের জন্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করলেও পরক্ষণেই আনুগত্যের শিরকে নত করে দিলেন মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ﷺ-এর সীদ্ধান্তের কাছে।

 

আমরা যারা দ্বীনের প্রচার-প্রসার এবং বিজয় চাই, তাঁরাও কখনো কখনো এভাবে শত্রুর সাথে সাময়িক কিছু চুক্তি করতে হতে পারে, যাতে বাহ্যিকভাবে দেখা যাবে হয়তো আমাদের চুক্তি, আমাদের পদ্ধতি ভুল হচ্ছে, আমরা স্বেচ্ছায় পরাজয় বরণ করে নিচ্ছি। বস্তুত তা হবে মহা বিজয়ের পূর্ব প্রস্তুতি। এক্ষেত্রে দায়িত্বশীলদের আন্দোলনের সহকর্মীদের দ্বারাও কিছু বিরোধিতার মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে, কিংবা তীক্ষ্ণ কিছু কথার তীরেও বিদ্ধ হওয়া লাগতে পারে। শত্রুপক্ষ দ্বারা অধীনস্থ কর্মী বাহিনীও ভীষণ ভয়ানক নির্মমতার শিকার হতে পারে; সে-ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলদের অতি সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। দিতে হবে ধৈর্যে এবং প্রজ্ঞার পরিচয় । বুঝাতে হবে কর্মী বাহিনীকে ভীষণ মমতায়— কুরআন এবং সুন্নাহর আলোকে। কর্মী বাহিনীকেও এমন পরিস্থিতে হটকারী কোনো সীদ্ধান্ত, কোনো

 

কাজকর্ম না করে চূড়ান্ত ধৈর্য আর অপরিসীম ত্যাগের নজরানা পেশ করার মতো দৃঢ় মানসিকতা রাখতে হবে। উত্তীর্ণ হতে হবে উৎকৃষ্ট আনুগত্যের পরীক্ষায়।

 

রেদওয়ান রাওয়াহা

লেখক ও কলামিস্ট

বিজ্ঞাপন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেইজে

[IT_EPOLL_VOTING id=”2057″][/IT_EPOLL_VOTING]