শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন

ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত ৩২ মণ ওজনের ‘মেসি’

লেখাপড়া শেষে চাকরির খোঁজে নামেন তিনি। অনেক নিয়োগ পরীক্ষায়ও অংশ নেন। কিন্তু চাকরি হয় না। তখন সিদ্ধান্ত নেন, চাকরির পেছনে আর ছুটবেন না। নিজেই একটা কিছু করবেন। পরে শিক্ষক বাবার পরামর্শে পাঁচটি গরু নিয়ে একটি খামার গড়ে তোলেন। বছর না যেতেই সফলতা পান। প্রতিবছর ঈদে ষাঁড় বিক্রি করেন। প্রতিদিন বিক্রি করেন দুধ।

খামার স্থাপন করে বেকারত্বকে জয় করা এই যুবকের নাম মো. আল আমিন আকন্দ। তিনি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার মীর হামজানি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক হাশেম আলী আকন্দের ছেলে। তাঁকে দেখে উৎসাহিত হয়ে এলাকার অনেক যুবক গরুর খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।এবার ঈদ সামনে রেখে আল আমীন ছয়টি ষাঁড় বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে একটির ওজন ৩২ মণ। নাম রেখেছেন ‘মেসি’। আশা করছেন ১০ লাখ টাকায় এটি বিক্রি করতে পারবেন।আল আমিন জানান, ২০০৬ সালে গ্রামের পাশে সল্লা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হন এলেঙ্গা শামছুল হক কলেজে। ওই কলেজ থেকেই ২০১৩ সালে স্নাতক (বিএসএস) পাস করেন। পরে চাকরির চেষ্টা শুরু করেন। কিন্তু চাকরি না হওয়ায় তাঁর বাবা তাঁকে পরামর্শ দেন গরুর খামার করার। ২০১৪ সালে নিজ বাড়িতে তিনি শুরু করেন গরুর খামার। আট বছর পর এখন তাঁর খামারে ১৫টি ষাঁড় ও ২০টি গাভি রয়েছে। গাভিগুলোর মধ্যে সাতটি দুধ দেয়। প্রতিদিন ৫০–৬০ লিটার দুধ বিক্রি করেন।

ঈদের সময় বিক্রি করেন ষাঁড়। গত বছর কোরবানির ঈদে পাঁচটি ষাঁড় বিক্রি করেছেন আট লাখ টাকায়। গত রোজার ঈদে দুটি ষাঁড় বিক্রি করেছেন আড়াই লাখ টাকায়।
এবার কোরবানির ঈদে তাঁর খামারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৩২ মণ ওজনের ষাঁড়। ওই ষাঁড়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মেসি’। তিন বছর ধরে এটি লালন–পালন করছেন। অনলাইনে মেসির বিজ্ঞাপন দেখে অনেক ক্রেতাই আসছেন তাঁর কাছে। এ ছাড়া আরও পাঁচটি ষাঁড় বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। এই পাঁচটি বিক্রি করে ১০ লাখ টাকা পাবেন বলে আশা করছেন। তাতে খরচ বাদে তাঁর ১০–১২ লাখ টাকা মুনাফা হবে বলে আশা করছেন।

গত মঙ্গলবার মীর হামজানি গ্রামে আল আমিনের খামারে গিয়ে দেখা যায়, লম্বা টিনশেড খামারের এক পাশে ১৫টি ষাঁড়, অন্য পাশে ২০টি গাভি। খামারের পাশেই দুই একর জায়গাজুড়ে নেপিয়ার ঘাস চাষ করা হয়েছে। পাশেই খড়ের গাদা। আল আমিন জানান, ঘাস, খড়, ভুষিসহ সব ধরনের দেশীয় খাবার তাঁর খামারের গরুগুলোকে খাওয়ান। নিয়মিত ভেটেরিনারি চিকিৎসক দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। তিনজন নিয়মিত কর্মচারী রয়েছেন ওই খামারে। সরেজমিন পরিদর্শনকালেই মোটরসাইকেলে করে ওই খামারে আসেন দুজন ক্রেতা। সরোয়ার হোসেন নামের একজন জানান, অনলাইনে গরুর খোঁজ পেয়ে এসেছেন। পছন্দ হলে ঈদে এখান থেকেই গরু নেবেন।

আল আমিন আকন্দ জানান, ‘গরুর খামার করে অনেক ভালো আছি। চাকরি করলে এত আয় করা যেত না। অযথা চাকরির পেছনে না ঘুরে এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েও স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে সরকারি পর্যায়ে সহজ শর্তে ঋণসুবিধা পেলে বেকার যুবকেরা সহজেই উদ্যোগ নিতে পারবেন।’ তাঁকে দেখে তাঁদের গ্রামের খলিলুর রহমান, আবদুল হান্নান মণ্ডল, আবদুল খালেকসহ অনেকেই গত তিন–চার বছরে খামার করে সফলতার মুখ দেখেছেন।

হান্নান মণ্ডল জানান, তিন বছর আগে চারটি গরু দিয়ে খামার শুরু করেছিলেন। এখন তাঁর খামারে গরুর সংখ্যা ৮। প্রতিবছরই বাড়ছে গরুর সংখ্যা।

স্থানীয় সল্লা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল আলিম জানান, আল আমিন সফল খামারি। তাঁর সাফল্য দেখে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে গরুর খামার করেছেন। চাকরির পিছে না ছুটে, বিদেশ না গিয়েও যে স্বাবলম্বী হওয়া যায় আল আমিন তার উদাহরণ।

-প্রথম আলো

বিজ্ঞাপন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেইজে

[IT_EPOLL_VOTING id=”2057″][/IT_EPOLL_VOTING]