মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতির এমন চিত্র উঠে এসেছে। যদিও চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিল মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে প্রায় ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গড়ে মূল্যস্ফীতি রয়েছে প্রায় দশের কাছাকাছি।
সেপ্টেম্বর মাসে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশে।যা আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। তবে গত মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। যা আগের মাসের চেয়ে কিছুটা কম হলেও ১২ শতাংশের নীচে নামেনি।
সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে যে পণ্য ১০০ টাকায় কিনতে হয়েছিল, এ বছরের সেপ্টেম্বরে তা কিনতে হয়েছে ১০৯ টাকা ৬৯ পয়সায়। আবার গত বছর একই সময়ে যে খাবার কিনতে হয়েছিল ১০০ টাকায় এ বছর সেপ্টেম্বরে তা কিনতে হয়েছে ১১২ টাকা ৩৭ পয়সায়।
বিবিএসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের গড় মূল্যস্ফীতির চেয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি। তবে খাদ্য-বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৮২ শতাংশের মধ্যে। আবার শহরের চেয়ে গ্রামের মূল্যস্ফীতি বেশি। গ্রাম এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গ্রামে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫১ শতাংশ, খাদ্য-বহির্ভূত পণ্যে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। তবে গ্রামের তুলনায় শহরের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কম। শহর এলাকায় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক শূন্য এক শতাংশ, খাদ্য-বহির্ভূত পণ্যে ৮ দশমিক ১২ শতাংশ।
এদিকে, দুর্বল মুদ্রানীতির কারণে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার চারটি কারণ চিহ্নিত করেছে। সংস্থাটির মতে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার মূল কারণগুলো হলো- অভ্যন্তরীণ জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়া, দুর্বল মুদ্রানীতি, টাকার অবমূল্যায়ন ও আমদানি কমে যাওয়া। বাংলাদেশের এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার। এ লক্ষ্যে মুদ্রানীতিও প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কিন্তু তিন মাস পার হয়ে গেলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রণয়ন করা মুদ্রানীতি কোনো কাজে আসছে না।মুদ্রানীতিতে পদক্ষেপ হিসেবে ৯-৬ সুদের হার তুলে নিয়ে স্মার্ট সুদহার প্রণয়ন করা হয়েছিল। টাকার প্রবাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বলে আসছিলেন, যে স্মার্ট সুদহার করা হয়েছিল তাও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট নয়। বিশ্বে এ মুহূর্তে যে কয়টি দেশ মূল্যস্ফীতি বেশি তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সফলদের মধ্যে প্রথম কাতারে শ্রীলংকা। এক বছর আগেও যে দেশে মূল্যস্ফীতি ৬০ শতাংশের বেশি ছিল, বর্তমানে তা চার শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। একইভাবে মূল্যস্ফীতি কমেছে ভারতেও।