শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ০১:০০ পূর্বাহ্ন

ভারতে ধারাবাহিক কমছে পাইকারির মূল্যসূচক, বাড়ছে বাংলাদেশে

খুচরা ও পাইকারি দরের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন পণ্যের পৃথক মূল্যসূচক প্রকাশ করে ভারত সরকার। গত পাঁচ মাস দেশটিতে পাইকারি পণ্যে মূল্যস্ফীতির হার রয়েছে ঋণাত্মক পর্যায়ে। অন্যদিকে বাংলাদেশে ক্রমাগত বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম। হুট করেই অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে দেখা যায় আলু, পেঁয়াজ, ডিমসহ বিভিন্ন পণ্যের বাজার। পাইকারি ব্যবসায়ী বা আড়তদাররাই মূলত এতে প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখছেন বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্টরা। আর এসব কারণেই সর্বশেষ দুই মাস আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ ছাড়িয়েছে, যা গত সাড়ে ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ভারতের মিনিস্ট্রি অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি থেকে প্রকাশিত ‘হোলসেল প্রাইস ইনডেক্স’-এ দেখা যায়, দেশটিতে গত ছয় মাসের মধ্যে পাইকারি পণ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি ছিল মার্চে, ১ দশমিক ৪১ শতাংশ। যদিও এর পরের মাস এপ্রিলেই তা নেমে যায় ঋণাত্মকে। ওই মাসে পাইকারি পণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ঋণাত্মক বা মাইনাস শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ। এছাড়া মে মাসে ঋণাত্মক ৩ দশমিক ৬১, জুনে ঋণাত্মক ৪ দশমিক ১৮, জুলাইয়ে ঋণাত্মক ১ দশমিক ৩৬ ও আগস্টে পাইকারি পণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ঋণাত্মক শূন্য দশমিক ৫২ শতাংশ। এ সূচক নির্ধারণে খাদ্যপণ্য, উৎপাদন খাতসংশ্লিষ্ট পণ্য এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসংশ্লিষ্ট পণ্যের পাইকারি দাম বিবেচনায় নেয়া হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের চিত্রটা তার ঠিক উল্টো। আগস্টে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে অবশ্য তার তুলনায় কিছুটা কমেছে। শূন্য দশমিক ২৯ পয়েন্ট কমে গত মাসে মূল্যস্ফীতি হয় ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। সেপ্টেম্বর ও আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ১২ দশমিক ৩৭ ও ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। মূলত পাইকারি বাজারের সিন্ডিকেটের কারণেই বিভিন্ন পণ্যের দাম অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে দেখা গেছে। কোনো কারণ ছাড়াই কখনো বেড়ে যাচ্ছে আলুর দাম, কখনোবা পেঁয়াজ-মরিচের। সম্প্রতি ডিমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মাছ-মুরগির দাম। এসব কারণে সরকারিভাবে বিভিন্ন পণ্যের মূল্যও বেঁধে দিতে দেখা গেছে।

বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর ডিম, আলু ও পেঁয়াজের মূল্য বেঁধে দেয় সরকার। প্রতি কেজি আলুর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ধরা হয় ৩৫-৩৬ টাকা, দেশী পেঁয়াজ ৬৪-৬৫ টাকা ও প্রতিটি ডিমের মূল্য ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। যদিও কোনো বাজারেই পণ্য মেলে না নির্ধারিত দামে। মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে খুচরা বিক্রেতাদের জরিমানা করা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে সিন্ডিকেট সদস্যরা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘বাজার অর্থনীতিতে কখনো লাভ হবে আবার কখনো লোকসান হবে, এটা স্বাভাবিক। লাভ হলে সেটা একান্তই ব্যবসায়ীদের থাকে, আবার লোকসানও তাদের হয়। সমস্যা হয়, যখন তারা অতিমুনাফা করে। তখন সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হয়। তবে বর্তমানে যে সময়, এ মৌসুমে স্বাভাবিকভাবেই কৃষিপণ্যের দাম একটু বেশি থাকে। আমরা চেষ্টা করছি বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার।’

আলুর মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আলু হিমাগারে এক মাস রাখার যা খরচ তিন মাসেও একই খরচ। সেক্ষেত্রে অল্প কিছুদিনে আলুর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমরা কয়েকটি পণ্যের মূল্য বেঁধে দিয়েছি। কিছু জায়গায় জেলা প্রশাসন থেকে নির্ধারিত দামে পণ্যগুলো বিক্রি হচ্ছে।’

মাঠ থেকে আলু উত্তোলনের পর মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে হিমাগারে যায়। এক্ষেত্রে কৃষক খুবই কম দামে এসব আলু বিক্রি করে দেন। মৌসুমের শুরুতে অর্থাৎ গত মার্চে কৃষক প্রতি কেজি আলু বিক্রি করেন ১০-১২ টাকায় কিন্তু জুলাই থেকে হঠাৎ অস্থির হয়ে পড়ে নিত্যপণ্যটির বাজার। বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু কিনতে হচ্ছে ৪৮-৫৫ টাকায়। শুধু এবারই নয়, প্রতি বছর কৃষকের পণ্য কিনে নেয়ার পর সিন্ডিকেট করে পাইকারিতে দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। সাধারণত কৃষক মার্চে ফড়িয়া ও আড়তদারদের কাছে আলু বিক্রি করেন। চাহিদার বেশি উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও জুলাইয়ের মধ্যে পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর—এ তিন মাসে তা সর্বোচ্চে গিয়ে ঠেকে। কৃষি খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছর আলুর দাম নিয়ে মূলত হিমাগার (কোল্ড স্টোরেজ) পর্যায়ে কারসাজি হয়। ফড়িয়া, হিমাগার মালিক ও আড়তদাররা মিলে গড়ে তোলে সিন্ডিকেট। সুযোগ বুঝে তারা দাম বাড়িয়ে দেয়।

জানা গেছে, দেশে আলুর চাহিদা ৭০-৭৫ লাখ টন। উৎপাদন-পরবর্তী সময়ে ২০-২৫ শতাংশ নষ্ট হয়। সে হিসেবে মোট চাহিদা দাঁড়ায় প্রায় ৯০ লাখ টন। অথচ এ বছর ১ কোটি ৪ লাখ টনের বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে। আবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সার্বিক খরচ বিবেচনায় নিলে প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয় সাড়ে ১১-১২ টাকা। আর হিমাগারে রাখতে প্রতি কেজির জন্য গুনতে হয় আরো ৫-৬ টাকা।

পেঁয়াজসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। দেশে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ৩০ লাখ টন। সর্বশেষ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ৩৪ লাখ টনের বেশি। তবে মাঠপর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যন্ত যেতে এক-চতুর্থাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয় কিংবা শুকিয়ে কমে যায়। চলতি বছরের মার্চে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। তবে গত এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকেই নিত্যপণ্যটির দাম বাড়তে শুরু করে। দেড় মাসের ব্যবধানে প্রায় তিন গুণ বেড়ে প্রতি কেজির দাম হয় ১০০ টাকা। বর্তমানেও দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকায়। এছাড়া সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে প্রতি পিস ডিমের দাম ১৫ টাকায় গিয়ে ঠেকে। বর্তমানেও সাড়ে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মুনাফা করতে না পারলেও আড়তদার বা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেশনের মাধ্যমে বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। সরকারি সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণেও এমনটা উঠে এসেছে।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘হিমাগারগুলোয় আলু মজুদ রেখে সংকট তৈরি করে বাড়তি দাম নিচ্ছে। আবার পেঁয়াজসহ অন্য অনেক পণ্যের ক্ষেত্রে অন্য দেশের নীতির কারণেও আমাদের দেশে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। কোনো আড়তদার যদি এক লাখ ডিম বিক্রি করে, সেখানে প্রতি ডিমে ১ টাকা করে বেশি দাম নিলেই তার প্রতিদিন ১ লাখ টাকা বেশি আয় হচ্ছে। এভাবে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে ১০ দিনের ব্যবধানে আরো ১০ লাখ টাকা সে আয় করতে পারছে। একটা গোষ্ঠী মূলত বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে। আমরা জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।’

তথ্যের ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকারকে অবশ্য কিছু সমস্যায় পড়তে হচ্ছে জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘উৎপাদন ও চাহিদার পরিসংখ্যানের সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই। আলু ও পেঁয়াজের উৎপাদনের পরিসংখ্যান হিসাব করলে এ বছর অনেক বেশি উদ্বৃত্ত থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা মাঠে নেই। এ বিষয়টিই আমাদের জন্য এখন সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং।’

ব্যবসায়ীদের দাবি, ডলার ও এলসি সংকট, ডলারের উচ্চমূল্যসহ বিভিন্ন জটিলতায় ব্যবসায়ীরা চাহিদামতো আমদানি করতে পারছেন না। বড় শিল্পগুলোর প্রতি সরকারি পর্যায় কিংবা ব্যাংকের পক্ষ থেকে সহায়তার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া হলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের আমদানিতে বেগ পেতে হচ্ছে। ফলে সংকটকালীন চাহিদা ও জোগান সংকটের কারণে বড় পাইকার কিংবা আমদানিকারক পর্যায়ে অতিমুনাফা করছে। তবে এ ধরনের মুনাফা সাময়িক এবং আগের লোকসান পুষিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে এটা ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে অন্যায্য নয় বলেও দাবি তাদের।

পোলট্রি খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শীত মৌসুমে ব্যবসায়ীরা ডিম উৎপাদন ও বিপণনে বড় লোকসান দেয়। এখন দাম বাড়তি থাকায় লাভের সময়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদারকি বাড়ানো হয়েছে। লোকসানের সময়েও এ ধরনের তদারকি জরুরি। সাম্প্রতিক সময়ে পোলট্রি খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে, আমদানি সংকটে সরবরাহও সীমিত। তাছাড়া লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ার ঘটনায় ডিমের কস্টিং (নিট উৎপাদন খরচ) বেড়েছে। ফলে সরকার আমদানির ঘোষণা দেয়ার পরও দেশে ডিমের বাজার কমছে না বলে দাবি করছেন তারা।

নিত্যপণ্যের বাজারকে বাধাধরা দামের মধ্যে রাখার চেয়ে মনিটরিং কিংবা নীতিসহায়তার দিকেই মনোযোগ দেয়া জরুরি বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রামের বৃহত্তর হামিদউল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায় মূলত আমদানিকারক, মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী ও পাইকারি বাজারে। ভোজ্যতেল, চিনি, চাল, গমের (আটা-ময়দা) ক্ষেত্রে বিপণন পদ্ধতি ও বৃহৎ আমদানিকারকরাই দাম বাড়াতে ভূমিকা রাখেন। এমনকি আলুর ক্ষেত্রেও হিমাগারে কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে সংকটকে পুঁজি করে দাম বাড়ানো হয়। কিন্তু আদা, রসুন, পেঁয়াজের ক্ষেত্রে সে সুযোগ নেই। দ্রুত পচনশীল হওয়ায় বছরের অধিকাংশ সময়ই লোকসানের ঝুঁকিতে থাকেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। পচনশীল নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে মাঠপর্যায় থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের সরকারি নীতিসহায়তা, কার্যকর মনিটরিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা গেলে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব।’ এক্ষেত্রে বর্তমানে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সংকট নিরসন না করে চাহিদাসম্পন্ন পণ্যের বাজারকে এককভাবে স্থিতিশীলতায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিজনিত কারণে বিকল্প কয়েকটি দেশ থেকে আমদানি হলেও ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়েছেন। চীন, পাকিস্তান থেকে আমদানি হওয়া পেঁয়াজ বিক্রিতে লোকসান দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে না পারায় পণ্যের সরবরাহ চ্যানেল ভেঙে গেছে। শতভাগ মার্জিন দিয়ে ঋণপত্র খুলতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও শতভাগের চেয়েও বেশি মার্জিন নিয়েও এলসি দিচ্ছে না ব্যাংক। এ কারণে কারো কাছে বাড়তি পণ্য থাকলে বিক্রেতা দাম হাঁকার আগেই বাড়তি দাম দিয়ে কিনে নিয়ে যাচ্ছে পণ্য। এতে দাম স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। মূল সংকট দূর না করে অতি নিত্য ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি রোধ করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

দেশে মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধিতে সিন্ডিকেশন অন্যতম ভূমিকা রাখছে মন্তব্য করে সাবেক খাদ্য সচিব আব্দুল লতিফ মন্ডল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রীরাও সিন্ডিকেশন নিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন। এছাড়া টাকার অবমূল্যায়ন, রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় কমে যাওয়া এবং টাকা পাচারের কারণেও মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা সবসময়ই বলে লোকসান হয়। আসলে আমরা উল্টো চিত্র দেখছি। যারা উৎপাদন করছেন তাদের সুরক্ষা দিতে হবে। কখনো যদি উৎপাদন খরচের চেয়ে বাজারে দাম কমে যায় সেক্ষেত্রে সরকারকে প্রণোদনা দিয়ে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সরকার দাম বেঁধে দিল কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এক্ষেত্রে শুধু নির্দিষ্ট সময় নয়, সারা বছরেই তদারকি করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘ভারতেও ডলারের বিপরীতে মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে। কিন্তু তাদের পাইকারি দর নিম্নমুখী। অর্থাৎ তারা পাইকারি বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন। এতে খুচরায়ও দাম কমবে। আমাদের দেশেও খুচরা পর্যায়ে খুব বেশি দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। মূলত পাইকারি পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির কারণেই মানুষকে বেশি ভুগতে হয়।

সিন্ডিকেশন নিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন খোদ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীও। গত বৃহস্পতিবার ফরিদপুরে এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘সিন্ডিকেট করে আলুর কোল্ড স্টোরেজগুলো (হিমাগার) সাধারণ মানুষের টাকা শুষে নিয়েছে। আমরা অসহায় হয়ে দেখেছি, কিচ্ছু করতে পারিনি। আমরা বেশি চাপ দিলে বাজার থেকে সব আলু তুলে নিয়ে যায়। আলুতে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। আলুতে আমাদের ঘাটতি নেই। তার পরও সিন্ডিকেটের কারণে আমাদের মাঝেমধ্যে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।’

তিনি বলেন, ‘কৃষক পেঁয়াজের ন্যায্য দাম পান না। আমরা পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছি। ফরিদপুরে ৫০-৬০টির মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা খুব কার্যকরী। ভবিষ্যতে আমরা এ প্রযুক্তি আরো ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতে চাই। সঠিকভাবে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারলে ভবিষ্যতে আর পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না।’

বিজ্ঞাপন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেইজে

[IT_EPOLL_VOTING id=”2057″][/IT_EPOLL_VOTING]