সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০১:৪২ অপরাহ্ন

ভারতের ঘুর্ণিতে বিধ্বস্ত পাকিস্তান

১২৮ রানেই গুটিয়ে গেছে পাকিস্তানের ইনিংস। ফলে ২২৮ রানের বড় জয় পেয়েছে সুপার ফোরে প্রথম ম্যাচ খেলা ভারত
জিততে হলে ৩৫৭ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য টপকাতে হতো পাকিস্তানকে। কিন্তু সিরাজ-বুমরাদের আগুনে বোলিং আর রান রেটের চাপে সেই লক্ষ্যের ধারে-কাছেও পৌঁছাতে পারেনি বাবর আজমরা। ১২৮ রানেই গুটিয়ে গেছে তাদের ইনিংস। ফলে ২২৮ রানের বড় জয় পেয়েছে সুপার ফোরে প্রথম ম্যাচ খেলা ভারত।

এশিয়া কাপের এবারের আসরে গ্রুপ পর্বের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটি ভেসে যায় বৃষ্টিতে। এরপর সুপার ফোরের ম্যাচটির জন্য রাখা হয় রিজার্ভ ডে। সবার আশঙ্কা সত্যি করে সুপার ফোরের ম্যাচটিতেও বাগড়া দেয় বৃষ্টি। ফলে রিজার্ভ ডেতেই গড়ায় ম্যাচ। রিজার্ভ ডেতেও দু’বার হানা দেয় বৃষ্টি।

বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুলের সেঞ্চুরিতে ভর করে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে পাকিস্তানকে ৩৫৭ রানের বিশাল লক্ষ্য দেয় ভারত। রোববার পাকিস্তানি বোলারদের দাপট দেখা গেলেও আজ ছিল তার ঠিক উল্টো চিত্র। গতকাল ভারত দুই উইকেট হারানোর পর আজ কোনো উইকেটের দেখাই পাননি পাকিস্তানের বোলাররা। অবশ্য দ্বিতীয় দিন মাঠে নামার আগেই বোলিংয়ে শক্তি কমে যাওয়ার খবর আসে পাকিস্তানের কাছে। সাইড স্ট্রেইনের চোটে দ্বিতীয় দিনে আর বোলিং করতে পারেননি হারিস রউফ।

ভারতের দেয়া ৩৫৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি পাকিস্তানের। দুই ওপেনার ফখর জামান ও ইমাম উল হক ধীরগতিতে রান তুলতে থাকেন। ভারতীয় পেসাররা সুইং ও বাউন্সার পাওয়ায় দুজনের কেউই সুবিধা করতে পারছিলেন না। যা দেখা গেছে পুরো ইনিংসজুড়ে।

পঞ্চম ওভারে দলীয় মাত্র ১৭ রানেই জসপ্রিত বুমরাহর বলে শুবমান গিলের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ইমাম।

ফখর জামানকে সঙ্গে নিয়ে বড় জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন অধিনায়ক বাবর আজম। তবে একাদশ ওভারেই তাকে হতাশ করেন হার্দিক পান্ডিয়া। ডানহাতি এই পেসারের অফ স্টাম্পের খানিকটা বাইরের বল বাঁক নিয়ে ভেতরে ঢুকলে সেটা বুঝেই উঠতে পারেননি বাবর। ২৪ বল খেলে মাত্র ১০ রানেই বোল্ড হয়ে ফিরে যেতে হয় তাকে।

বাবরের ফেরার পরই ম্যাচে ফের হানা দেয় বৃষ্টি। ফলে বেশ কিছুক্ষণের জন্য বিঘ্নিত হয় পাকিস্তানের ম্যাচে ফেরার লড়াই।

বৃষ্টি তামলে দলকে টেনে তুলতে ক্রিজে আসেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। তবে স্কোরবোর্ডে মাত্র ৪ রান যোগ না হতেই দলকে আরও বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন পাক উইকেটরক্ষক। ৫ বলে ২ রান করে শার্দুল ঠাকুরের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন তিনি।

আগা সালমান ও ফখর জামান মিলে আবার জুটি বড় করার চেষ্টা করলেও তা হতে দেননি কুলদীপ যাদব। বাঁহাতি এই স্পিনারের ঝুঁলিয়ে দেয়া ডেলিভারিতে স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফেরেন ফখর। ৫০ বল খেলে ২৭ রানে বাঁহাতি এই ওপেনার ফিরলে কয়েক ওভারের ব্যবধানে সালমানকেও লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে সাজঘরে ফেরান কুলদীপ। আগা সালমান ব্যক্তিগত ২৩ রান করে ফিরে গেলে পাকিস্তানের স্কোরবোর্ডের অবস্থা তখন দাঁড়ায় ২৪ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ৯৬ রান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পাকিস্তান।

এরপর নিয়মিত বিরতিতে ক্রিজে যাওয়া-আসায় ব্যস্ত ছিলেন বাকি ব্যাটাররা। এরমধ্যে ইফতিখার আহেমেদের ২৩ রান কেবল পাকিস্তানের হারের ব্যবধানই কমিয়েছে।

হারিস রউফ ও নাসিম শাহ চোটের কারণে ব্যাটিংয়ে নামতে না পারলে ৩২তম ওভার শেষে ১২৮ রানেই থেমে যায় পাকিস্তানের রানের চাকা। ফলে ২২৮ রানের বিশাল জয় পায় রোহিত শর্মার ভারত।

ভারতের হয়ে এ ম্যাচে ২৫ রান খরচ করে ৫ উইকেট নিয়েছেন কুলদীপ। এ ছাড়া একটি করে উইকেট পেয়েছেন বুমরাহ, হার্দিক ও শার্দুল।

ভারতের রানের পাহাড়ে চাপা পড়ল পাকিস্তান
এর আগে রোববার টস জিতে আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম। ওইদিন বৃষ্টির আগ পর্যন্ত ২ ওপেনারকে হারিয়ে ১৪৭ রান সংগ্রহ করেছিল ভারত। বিরাট কোহলি ৮ ও লোকেশ রাহুল ১৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন।

বোরবার ব্যাটিংয়ে নেমেই ভারতকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল। পাওয়ার প্লেতে ৬১ রান তোলেন এই দুই ব্যাটার। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পর পাকিস্তানের বোলারদের ওপর আরও চড়াও হতে থাকেন হিটম্যান। ৪২ বলে অর্ধশতক তুলে নেন রোহিত। অন্যপ্রান্তে মাত্র ৩৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন গিল।

১৬.৪তম ওভারে উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন ভাঙেন শাদাব। ডানহাতি এই স্পিনারের ঝুঁলিয়ে দেয়া বলে এক্সট্রা কভার দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন রোহিত। তবে লং অফে শাদাবের হাতে ধরা পড়ে ৫৬ রানের মাথায় থামেন তিনি।

৮ বলের ব্যবধানে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান গিলও। আফ্রিদির গুড লেংথ ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে আগা সালমানের হাতে ক্যাচ দেন তরুণ এই ওপেনার। ৫৮ রানের ইনিংস খেলে আউট হন গিল। এরপর বৃষ্টির আগ পর্যন্ত ধীর ব্যাটিংয়ে উইকেটে থিতু হন কোহলি ও রাহুল।

গতকাল ভারত দুই উইকেট হারানোর পর আজ কোনো উইকেটের দেখাই পাননি পাকিস্তানের বোলাররা। নির্ধারিত পঞ্চাশ ওভারে ৩৫৬ রান তুলেছে ভারত। বিরাট কোহলি ৯৪ বলে ১২২ ও লোকেশ রাহুল ১০৬ বলে ১১১ রান করে অপরাজিত থেকে ইনিংস শেষ করেন।

রিজার্ভ ডেতে বৃষ্টি ও ভেজা মাঠের কারণে নির্ধারিত সময়ে শুরু হতে পারেনি ম্যাচ। পরে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে শুরু হয় ম্যাচটি।

এদিন মাঠে নেমে পাকিস্তানের বোলারদের কোনো সুযোগই দেননি রাহুল ও কোহলি। আগুনে ব্যাটিংয়ে ৬০ বলে নিজের হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন রাহুল। খানিক বাদে কোহলিও ৫৫ বলে পান হাফ সেঞ্চুরির দেখা। তবে সেঞ্চুরি পর্যন্ত পৌঁছাতে পরে মাত্র ৪০টি বল খেলেন রাহুল। আর কোহলি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৭৭তম সেঞ্চুরি তুলে নেন ৮৪ বলে।

সেঞ্চুরি করার পথে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৩ হাজার রানের মাইলফলকও স্পর্শ করেন কোহলি। শুধু তাই নয়, ত্রুত ১৩ হাজার রান সংগ্রহে ভারতের কিংবদন্তি ব্যটার শচীন টেন্ডুলকারকে টপকে ওয়ানডেতে দ্রুততম ১৩ হাজার রান করার রেকর্ড গড়েন কোহলি। দ্রুততম ১৩ হাজার রানের ক্লাবে ঢুকতে শচীনের ইনিংস খেলতে হয়েছিল ৩২১টি। আর কোহলি তা করেছেন ২৬৭ ইনিংসে।

পাকিস্তানের হয়ে বল হাতে শাহীন আফ্রিদি ও শাদাব খান নেন ১টি করে উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ৩৫৬/২ (৫০ ওভার); কোহলি ১২২(৯৪), রাহুল ১১১ (১০৬); শাদাব খান ১/৭১, শাহীন আফ্রিদি ১/৭৯।

পাকিস্তান: ১২৮/১০ (৩২ ওভার); ফখর ২৭(৫০), আগা সালমান ২৩(৩২); কুলদিপ ৫/২৫, হার্দিক ১/১৭।

ফলাফল: ভারত ২২৮ রানে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: বিরাট কোহলি

বিজ্ঞাপন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেইজে

[IT_EPOLL_VOTING id=”2057″][/IT_EPOLL_VOTING]