সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০২:৪৫ অপরাহ্ন

দুর্নীতির মাত্রা পূর্বের তুলনায় বেড়েছে, এটা জাতীয় সমস্যা: সংসদে পরিকল্পনামন্ত্রী

সারা দেশের অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতির মাত্রা পূর্বের তুলনায় বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি এটাকে জাতীয় সমস্যা বলেও উল্লেখ করেন।

রোববার জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথোরিটি বিল–২০২৩ পাসের আলোচনায় বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে তিনি এই কথা বলেন। বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা।

তাঁদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে দুর্নীতি বেড়েছে এটি স্বীকার করে নেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, একটি বিষয়ে তারা (আলোচনায় অংশ নেওয়া সংসদ সদস্য) সবাই একমত, আমিও তাদের সঙ্গে একমত। সারা দেশের সর্বত্র, অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতির মাত্রা পূর্বের তুলনায় বেড়েছে। তুলনা বলতে আনুপাতিক হারে। যে পরিমাণ পাবলিক মানি ৩০-৪০ বছর আগে ব্যয় হতো, তার তুলনায় ২-৩-৪ গুণ বেশি ব্যয় হচ্ছে। ফলে সুযোগ-সুবিধা… চুরির সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে আমি বলব। এটা জাতীয় সমস্যা। আইন-কানুন পাশ করে, বর্তমান প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনমত তৈরি করে, জনগণের কাছে স্বচ্ছতা তুলে ধরে প্রচার করি এর পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমে আসবে।

এম এ মান্নান বলেন, হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্প আমার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পার হয়ে যায়। এগুলোর জন্য একসময় ক্রয়ে যেতে হয়। অতীতের যে সিপিটিইউ ছিল সেটা বর্তমান সময়ে ভলিউমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না। তাদের জনবল, যন্ত্রপাতির অভাব, অনেক ক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতার অভাব। সেই সমস্যার সমাধানে বিলটা আনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, কোনো টেন্ডার আমি মন্ত্রী বা সিপিটিইউ ডিজি পাশ করতে পারি না। কয়েকটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা বাছাই করে ফাইনালে যায়। এরপরও যদি সংশয়বোধ থাকে, সেই ভূতের ভয় না পেয়ে আমাদের একটানা প্রচেষ্টা চালিয়ে  যেতে হবে।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, এ আইনটির মূল উদ্দেশ্য ছিল টেন্ডারবাজি বন্ধ করা। এতে কিছু ভালো হয়েছে। কিছু খারাপ দিকও হয়েছে। আগে ১০ শতাংশ, ২০ শতাংশ দুর্নীতি হতো। আর এখন ১০ শতাংশ, ২০ শতাংশ  কাজ হয়, কোনো  কোনো ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ  দুর্নীতি হয়।

‘মন্ত্রণালয়ের অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প আটকে দেওয়ার ক্ষমতা আছে উল্লেখ করে শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প, মেগা প্রকল্প ওনার (পরিকল্পনা মন্ত্রী) কাছ থেকে যায়, তখন তিনি যদি আটকাতে পারতেন তাহলে দেশের অর্থনীতি, আমাদের  কাছে অনেক টাকা থাকত। অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প আসছে কিন্তু তা থেকে রিটার্ন আসছে না। এটা বোঝার মত সক্ষমতা নেই এটা আমি বিশ্বাস করি না। অবশ্যই আছে।”

‘ক্ষমতার অতিমাত্রায় এক কেন্দ্রীকরণের একজন জ্ঞানী মন্ত্রীও যদি আটকাতে চান তাহলে সেই ক্ষমতা তার কাছে নেই। কারণ সাপোটিং ইনস্টিটিউশন নেই। সেটা করতে হবে। আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা খারাপ। ব্যাংক প্রচণ্ড ঝুঁকির মুখে। ডলার খোলাবাজারে কতটাকায় বিক্রি হচ্ছে এটা এখানে বলবো না, বাজারে প্যানিক সৃষ্টি হয়েছে। কালকে আমার এক রোগীর জন্য কিনেছি।”

“এর আগে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, এখন টেন্ডারবাজি বন্ধ হয়েছে। কিন্তু তাতে রাষ্ট্রের কোনো লাভ হয়নি। এক শ্রেণির আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ বর্তমান টেন্ডার ব্যবস্থাকে নিরাপদ মনে করে এবং এর আড়ালে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করছে। এর ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে, পর্দা কেনা, বালিশ কেনা…। ”

“সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি ও পেশাদারত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথোরিটি (বিপিপিএ) ’ নামে একটি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করবে সরকার। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথোরিটি বিল–২০২৩ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। রোববার পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বিলটি পাসের জন্য জাতীয় সংসদে জাতীয় সংসদে তোলেন। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি পাস হয়। ”

“বিলে বলা হয়েছে, এই আইন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) বিলুপ্ত হবে। বিপিপিএর ১৭ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে। তবে সরকার চাইলে সদস্যসংখ্যা বাড়াতে কমাতে পারবে। পরিকল্পনামন্ত্রী হবেন এই কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। আর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞ কাউকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ করবে সরকার। এই কর্তৃপক্ষের একটি তহবিল থাকবে। বিপিপিএ তার কাজ সম্পাদনের জন্য যেকোনো  ব্যক্তি বা সংস্থার জন্য চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে।”

বিজ্ঞাপন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেইজে

[IT_EPOLL_VOTING id=”2057″][/IT_EPOLL_VOTING]