সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০২:৩৯ অপরাহ্ন

ইসরায়েলে নাচ-গানের অনুষ্ঠানটি যেভাবে নরকে পরিণত হলো

বাংলাদেশ সময় রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই হামলার ঘটনায় ৪৪ সেনাসহ ছয় শতাধিক ইসরায়েলি নিহত হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম দাবি করেছে। প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলি বাহিনীও ফিলিস্তিনে একের পর এক হামলা পরিচালনা করছে। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৩৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

হামলার সময় মিউজিক ফেস্টিভ্যালে উপস্থিত ছিলেন গিলি ইয়োসকোভিচ নামে ইসরায়েলি এক নারী। বিবিসির কাছে হামলার মুহূর্তটির বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।

কয়েক সপ্তাহ ধরেই সংগীতপ্রেমীরা জড়ো হচ্ছিলেন ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত নেগেভ মরুভূমিতে। সেখানে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল সুপারনোভা মিউজিক ফেস্টিভ্যাল। ইহুদিদের ধর্মীয় সুকোট উৎসবও একাকার হয়ে গিয়েছিল এই উৎসবের সঙ্গে। আগত অতিথিদের অনেকই উৎসবের স্থানটির কাছে পরিবার কিংবা পরিজন নিয়ে তাঁবু ফেলেছিল।

নেগেভ মরুভূমিটি কিব্বুৎজ রি-ইম এলাকার কাছাকাছি এবং গাজা উপত্যকা থেকে খুব বেশি দূরে নয়। গতকাল শনিবার সকালে সেখানে অনুষ্ঠিত উৎসবের মধ্যে উপস্থিত হয়ে হামাস যোদ্ধারা হামলা চালান। এতে ঘটনাস্থলেই শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং শতাধিক মানুষকে অপহরণ করে নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা।

গিলি জানান, হামাস যোদ্ধারা যখন উৎসবের স্থানটিতে উপস্থিত হন—সেই সময়টিতে নাচে মত্ত ছিলেন অংশগ্রহণকারীরা। যোদ্ধারা সেখানে গিয়েই নির্বিচার গুলি শুরু করেন। তাঁরা যাকেই সামনে পাচ্ছিলেন, তাকে গুলি করে মারছিলেন।

প্রাণ বাঁচাতে ভীত-সন্ত্রস্ত গিলি দৌড়ে একটি ফলের গাছের আড়ালে গিয়ে আত্মগোপন করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা তিনি সেখানে দাঁত কামড় দিয়ে পড়ে ছিলেন। তাঁর পাশ দিয়েই চলে গেছে মুহুর্মুহু গুলি। সারা রাত ধর্মীয় অনুষ্ঠান সুকোট উদ্‌যাপন করে ক্লান্ত ছিলেন তরুণ বয়সীরা। হামলাকারীরা গাছ থেকে গাছে গিয়ে তাঁদের খুঁজে বের করে হত্যা করছিল। একপর্যায়ে হিব্রু ভাষায় কেউ কথা বলছে এমন আওয়াজ পেয়ে আড়াল থেকে বেরিয়ে আসেন গিলি। পরে ইসরায়েলি সৈন্যরা তাঁকে উদ্ধার করে।

বিবিসিকে গিলি বলেন, ‘আমি দেখছিলাম, চারপাশেই মানুষজন মরে পড়ছে। আমি খুব শান্ত ছিলাম। কোনো চিৎকার করিনি। আমি আসলে কিছুই করিনি।’

নিশ্চিতভাবে মারা যাচ্ছেন এই ভেবে দুই চোখ বন্ধ করে শুধু শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছিলেন গিলি। শুয়ে শুয়ে সন্তানদের কথা ভাবছিলেন শুধু। আর নিজেকে বলছিলেন, ‘এখনো মরার সময় হয়নি।’

গিলি বলেন, ‘তারপর আমি একদিক থেকে কিছু হিব্রু কথা শুনতে শুরু করলাম, যদিও বাকি তিন দিক থেকে আরবি কথা ভেসে আসছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, কিছু সৈন্য সম্ভবত পাঁচ বা ছয়জন সেখানে উপস্থিত হয়েছে।

‘আমি সৈন্যদের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আশপাশে তখনো সন্ত্রাসীরা ছিল। তাই আমি হাত ওপরে তুলে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, যেন সৈন্যরা আমাকে সন্ত্রাসী না ভাবে। তখন কেউ একজন আমাকে গাড়িতে নিয়ে তোলে।’

গিলি জানান, ঘটনাস্থল থেকে তাঁকেই সবার আগে উদ্ধার করা হয়েছে।

উৎসবে অংশ নেওয়া ড্যানিয়েল নামে আরেকজন জানান, উৎসবের স্থানটিতে একটি লাল সাইরেনের মাধ্যমে আসন্ন হামলার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করা হয়। হামলার আগমুহূর্তে ধারণ করা একাধিক ভিডিওতেও বিষয়টি দেখা গেছে। লাল সাইরেন দেখে অনেকেই ছোটাছুটি শুরু করেছিলেন।

ড্যানিয়েল বলেন, ‘সাইরেনের ফলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে, গাড়িগুলো ঘটনাস্থল ত্যাগ করার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করে। তারপরই গুলি শুরু হয় এবং আমরা দৌড়াতে শুরু করি।’

‘হামাস যোদ্ধারা ঘটনাস্থলে থাকা সাইরেনটি গুলি করে উড়িয়ে দিয়েছিল। গাড়িতে ভারী অস্ত্র বোঝাই করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় তারা। তাদের একটি অংশ প্যারাগ্লাইডিং করেও আকাশ থেকে নিচে নেমে এসেছিল।’

উৎসবের স্থানটিতে তিনটি স্টেজ ছিল। তাঁবু ফেলার জায়গা ছাড়াও খাবার এবং মদ্যপানের জন্য আলাদা আলাদা স্থান নির্ধারিত ছিল। অ্যাডাম ব্যারেল নামে একজন জানান, তিনি তাঁর গাড়িতে চড়ে ঘটনাস্থল দ্রুত ত্যাগ করতে চাইছিলেন। কিন্তু খুব কাছে থাকা একটি জিপ থেকে অস্ত্রধারীরা তাঁর গাড়িটিকে উদ্দেশ্য করে গুলি শুরু করে। এ অবস্থায় তিনি গাড়ি থেকে কোনোক্রমে নেমে দৌড়াতে শুরু করেন। ব্যারেল বলেন, ‘যে যেদিকে পারছিল, পালাচ্ছিল।’

 

বিজ্ঞাপন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেইজে

[IT_EPOLL_VOTING id=”2057″][/IT_EPOLL_VOTING]