গাজীপুরের টঙ্গীর সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন এন্ড কলেজে পড়াশুনা করতো একই পরিবাররের দুই ভাই। পরিবাররের অস্বচ্ছলতার কারণে রিকশা চালিয়ে এস এস সি ২০২২ ইং পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৫ অর্জন করেন তারা, ২ ভাই মিনহাজুল আবেদীন (নয়া) ও তৌহিদুর রহমান (নিশাত)।
জানা যায়, মিনহাজুল ও তৌহিদুল এর বাবা মো. মোশাররফ হোসেন আগে গার্মেন্টস ব্যবসা করতেন। বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে টঙ্গীতে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ব্যবসায় ক্ষতি হওয়ায় পাওনাদারের চাপে তার দুই ছেলেও রিকশা চালানো শুরু করে। রাতে টঙ্গীর বিভিন্ন অঞ্চলে রিকশা চালিয়ে যা উপার্জন হতো তার সবটুকুই সকালে বাবার হাতে তুলে দিতেন ২ সন্তান। সকালে স্কুলে ক্লাস করে সন্ধ্যায় রিকশা চালাতেন দুই ভাই।
মিনহাজুল ও তৌহিদুল জানায়, বাবার ব্যবসায় লোকসান হবার পর থেকে বাবার একার পক্ষে সংসার চালিয়ে পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছিলো না। তাই আমরা ২ ভাই পড়াশোনার পাশাপাশি রিকশা চালানোর সিদ্ধান্ত নেই। তবে আয়ের চেয়ে ঋণের পরিমাণ বেশি হওয়ায় পড়াশুনার খরচ চালানো কষ্টকর ছিলো। আজকে আমার এই অর্জনের পিছনে সবচাইতে বড় অবদান রয়েছে সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আমাদের আবিভাবক ওয়াদুদুর রহমান স্যার। স্যারের দেওয়া সুযোগ সুবিধার কারণে আমাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে। পরিবারে অভাব অনটনের কারণে দিনে ক্লাস করে সন্ধ্যায় ২ ভাই মিলে টঙ্গীর বিভিন্ন জায়গায় রিকশা চালাতাম। রিকশা চালিয়ে পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ ও নিজেদের পড়ালেখার খরচ চালাতাম। আমাদের অবিভাবক ওয়াদুদুর রহমান স্যার আমাদের স্বপ্নকে বড় করে দেখেছেন।
তিনি বলেছেন- আমাদের ডাক্তার হওয়া ও লেখাপড়া চালিয়ে যেতে তিনি সার্বিক সহযোগীতা করবেন। আমরা প্রিয় স্যারসহ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদের কাছে চির কৃতজ্ঞ হয়ে থাকবো।
তারা আরোও জানায়, আমাদের বাবা অসুস্থ ছিলো। টাকার জন্য সঠিক চিকিৎসা করাতে পারিনি। যখন আমরা স্বচ্ছল ছিলাম তখন আমাদের ২ ভাইয়েরই স্বপ্ন ছিলো আমরা ডাক্তার হবো। আমাদের এস এস সি ফলাফল এর পর এ ইচ্ছা আরোও তুখোড় হয়ে গেলো। কিছুদিন আগে আমাদের বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে গেলে টাকার অভাবে সুচিকিৎসা করাতে পারিনি। তাই আমরা দুই ভাই ডাক্তার হয়ে সুবিধাবঞ্চিত লোকদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করবো এটাই আমাদের স্বপ্ন।
দেশরত্ন শেখ হাসিনা ডিজিটাল গণ গ্রন্থাগার এর প্রতিষ্ঠাতা মো: তানভীর জানান, তারা দুই ভাই খুব মেধাবী। আমার সাথে পরিচয় হবার পর থেকেই আমি বিভিন্ন সময় তাদের অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ দিয়ে থাকতাম। এছাড়াও তারা তাদের স্বপ্ন অর্জনে কি পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ তা পরামর্শ দিয়ে থাকতাম। তারা দুই ভাই এতো সুন্দর ফলাফল করায় খুব আনন্দ লাগছে। দুই ভাইয়ের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো তারা যেনো তাদের ডাক্তার হবার স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হয়।
টঙ্গী সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো: ওয়াদুদুর রহমান বলেন, আমাদের স্কুলের ২ শিক্ষার্থী মিনহাজুল ও তৌহিদুল। তারা ২ ভাই একসাথে এস এস সি পরিক্ষায় আংশগ্রহণ করে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। এবিষয় টি সত্যিই খুব সুখকর। স্কুলে ভর্তি হবার পর থেকে আমি ওদের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রেখেছি। যতটুকু সম্ভব তাদের সহযোগীতা করেছি। তাদের স্কুলের বেতন ও অন্যান্য ফি মওকুফ করেছি। তাদের এই অর্জন যেনো আমার নিজেরও অর্জন। আমি আশাবাদী তারা ২ ভাই তাদের ডাক্তার হবার স্বপ্ন পূরণ করে দেশ ও জাতীর উপকার করবে।