মোট ২২ টি অধিবেশন নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। যেখানে একাদশ সংসদ নির্বাচনে কোরাম সংকটে মোট ৫৪ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট কর্মঘণ্টা সময় নষ্ট হয়েছে। যা কার্যদিবস অনুযায়ী গড় প্রতি ১৪ মিনিট ৮ সেকেন্ড। অধিবেশন শুরুর তুলনায় বিরতি পরবর্তী সময়ে কোরাম সংকটের আধিক্য লক্ষণীয় ছিল। ৮৪ শতাংশ কার্যদিবসে নির্ধারিত সময় থেকে বিলম্বে শুরু হয়। কোরাম সংকটে মিনিট প্রতি ব্যয় প্রায় ২ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৪ টাকা। আর কোরাম সংকটে ব্যয়িত সময়ের প্রাক্কলিত অর্থমূল্য প্রায় ৮৯ কোটি ২৮ লাখ ৮ হাজার ৭৭৯ টাকা।
বিজ্ঞাপন
সংসদে সদস্যরা দেরিতে আসায় ২২টি অধিবেশনে কোরাম সংকটে ব্যয়িত সময়ের প্রাক্কলিত অর্থমূল্য প্রায় ৮৯ কোটি ২৮ লাখ ৮ হাজার ৭৭৯ টাকা। আজ রোববার (১ অক্টোবর) টিআইবির কার্যালয়ে ‘পার্লামেন্টওয়াচ: একাদশ জাতীয় সংসদ- ১ম থেকে ২২তম অধিবেশন (জানুয়ারি ২০১৯ – এপ্রিল ২০২৩)’- শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য-উপাত্ত উত্থাপন করা হয়েছে।
টিআইবির গবেষণায় আরো বলা হয়, আইন প্রণয়ন, জনগণের প্রতিনিধিত্ব ও সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিতের ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদের অধিবেশনগুলো প্রত্যাশিত পর্যায়ে কার্যকর ছিল না বলে দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসঙ্গে সংসদের কার্যক্রম পরিচালনায় স্পিকারের জোরালো ভূমিকার ঘাটতি ছিল বলে মনে করে সংস্থাটি।
টিআইবির দাবি, প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একাদশ সংসদ নির্বাচনে সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে আইন প্রণয়ন, বাজেট ও স্থায়ী কমিটি একচ্ছত্র ক্ষমতার চর্চার ব্যাপকতা ছিল। সংসদীয় কার্যক্রমে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির শক্তিশালী ভূমিকা পালনেও ব্যর্থ ছিল। সংসদে মোট ২২ অধিবেশনে কোরাম সংকটে মোট ৫৪ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট কর্মঘণ্টা সময় নষ্ট হয়েছে। যার প্রাক্কলিত অর্থমূল্য প্রায় ৮৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একাদশ সংসদে পাসকৃত ৫২ শতাংশ বিলের ক্ষেত্রে কোনো সংশোধনী গৃহীত হয়নি এবং ৪৭ শতাংশ বিলের ক্ষেত্রে আংশিকভাবে সংশোধনী গৃহীত হয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীসমূহে উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রস্তাব থাকলেও সংশোধনী গ্রহণের ক্ষেত্রে শব্দ সন্নিবেশ ও প্রতিস্থাপনই প্রাধান্য পেয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে উত্থাপিত প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর না দিয়ে বিরোধী দলের অতীত ইতিহাস, বিলের প্রয়োজনীয়তা, যথেষ্ট যাচাই-বাছাই পূর্বক বিলের প্রস্তাব উত্থাপিত ইত্যাদি কারণ দেখিয়ে বিলের ওপর প্রদত্ত নোটিশসমূহ খারিজ করা হয়েছে। সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে বিলের ওপর উত্থাপিত অধিকাংশ নোটিশসমূহ খারিজ হয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো সংশোধনী ছাড়াই বিল পাস হয়েছে।
এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একাদশ সংসদ নির্বাচনে সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে আইন প্রণয়ন, বাজেট ও স্থায়ী কমিটির একচ্ছত্র ক্ষমতার চর্চার ব্যাপকতা দেখা গেছে। সংসদকে কার্যকর করে তুলতে বিরোধী দলের শক্তিশালী ভূমিকা পালনে ঘাটতি ছিল। জনপ্রতিনিধিত্বমূলক কার্যক্রমে তুলনামূলক কম গুরুত্ব প্রদান যেমন- কার্যক্রম স্থগিত রাখা, চলমান জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ অনালোচিত থাকা ইত্যাদি এবং সার্বিকভাবে নবম ও দশম সংসদে ব্যয়িত সময় ও অংশগ্রহণের হার কমেছে।
সংসদে নারী সদস্যদের প্রতিনিধিত্ব এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ হলেও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২ মোতাবেক ২০২০ সালের মধ্যে তা ৩৩ শতাংশ নিশ্চিত করা যায়নি। সংসদীয় বিভিন্ন কার্যক্রমে নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেলেও কার্যকর অংশগ্রহণে ঘাটতি ছিল বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।