যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের কারণে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান ও তার দল তেহরিক-ই-ইনফাস (পিটিআই)। ইমরান খানের সেই অপমানের জবাব দিয়েছেন দেশটির জনগণ। ২৬৫ আসনের মধ্যে ২৫২টি আসনের ফল ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত প্রার্থী ৯৭ জন। অন্যদিকে নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন পেয়েছে ৭২টি আসন এবং বিলাওয়াল ভুট্টোর পিপিপি পেয়েছে ৫২টি আসন। তবে ভোটে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়ে এগিয়ে থাকলেও রাজনীতির খেলায় শেষ পর্যন্ত হারতে হচ্ছে ইমরান খানকে।
কয়েকটি আসনে ফল ঘোষণা করা বাকি থাকলেও পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) কেন্দ্র এবং পাঞ্জাব প্রদেশে জোট সরকার গঠনে একমত হয়েছে। পিএমএল-এনের প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফ পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির সঙ্গে দেখা করে পাকিস্তানের জন্য একসঙ্গে কাজ করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এ ছাড়া পাঞ্জাবের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মহসিন নকভির বাসভবনে পিপিপি শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও দেখা করেছেন শাহবাজ। তিনি জারদারির সঙ্গে ভবিষ্যৎ সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং নওয়াজ শরিফের বার্তাও পৌঁছে দিয়েছেন।
ভোটের দুদিন পার হলেও এখনো সব আসনের ফল ঘোষণা করতে পারেনি পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)। ২৬৫ আসনের মধ্যে ২৫২টি আসনের ফল ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত ফলে নওয়াজ শরিফ ও বিলাওয়াল ভুট্টোর দলের চেয়ে বেশ ভালো ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাদের অধিকাংশই ইমরান খানের পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে ফলাফলের দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পিএমএল-এন ও পিপিপি। এই দুটি দলই জোট গঠনের বিষয়ে একমত হয়েছে।
পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান ও পিএমএল (এন)-এর নেতা নওয়াজ শরিফ দুজনই নিজেদের বিজয়ী দাবি করে ভাষণ দিয়েছেন। শুক্রবার রাতে দুজনই বিজয়ী ভাষণ দিয়েছেন। শুরুটা করেছেন অবশ্য নওয়াজ শরিফ। নির্বাচনে পিছিয়ে থেকেও নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন তিনি। তিনি দাবি করেন, নির্বাচনে এককভাবে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে তার দল। তবে সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও সরকার গঠনের জন্য তা যথেষ্ট নয় জানিয়ে জোট সরকার গঠনের কথা বলেছেন তিনি।
সফল নির্বাচনের জন্য দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল অসীম মুনির। আইএসপিআরের এক বিবৃতিতে জেনারেল মুনির তত্ত্বাবধায়ক সরকার, পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল এবং বিজয়ী সকল প্রার্থীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের জনগণের তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগের জন্য অবাধ এবং বাধাহীন অংশগ্রহণ পাকিস্তানের সংবিধানে বর্ণিত গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনের প্রতি তাদের অঙ্গীকার প্রদর্শন করে।
একই সঙ্গে অপ্রতিরোধ্য প্রতিকূলতার মধ্যেও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ প্রশংসার দাবিদার বলেও জানান তিনি।
এ ছাড়া জাতীয় গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, বেসামরিক প্রশাসন এবং বিচার বিভাগের সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত গঠনমূলক ভূমিকা নির্বাচন সফলে ভূমিকা রেখেছে।
বিবৃতি আরও বলা হয়, নির্বাচন জয়-পরাজয়ের শূন্য-সমষ্টি নয় বরং জনগণের ম্যান্ডেট নির্ধারণের একটি মহড়া। রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং তাদের কর্মীদের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের শাসন ও সেবা করার প্রচেষ্টাকে একত্রিত করা উচিত, যা গণতন্ত্রকে কার্যকরী ও উদ্দেশ্যমূলক করার একমাত্র উপায় হতে পারে।
পাকিস্তানের জনগণ যেহেতু পাকিস্তানের সংবিধানের প্রতি তাদের সম্মিলিত আস্থা রেখেছে, এখন রাজনৈতিক পরিপক্বতা এবং ঐক্যের সঙ্গে এর প্রতিদান দেওয়া সব রাজনৈতিক দলের কর্তব্য।