গত তেইশ ফেব্রুয়ারি আনুমানিক রাত পোনে দশটার দিকে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে সাত আটজন দূর্বৃত্ত গণধর্ষণ করে। মাঝরাত অতিক্রম হওয়ার পর এই সংবাদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কানে পৌছালে উক্ত শিক্ষার্থীকে নিয়ে প্রশাসন থানায় রওনা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে৷
একই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষার্থীরা থানায় জড়ো হতে থাকে।এসময় শিক্ষার্থীরা ধর্ষনের সাথে যুক্ত সকলের অতি দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা, দোষীদের পরিচয় প্রকাশ এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের নিকট দাবি জানায়৷
পরদিন সকাল থেকে ধর্ষণের বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা খুলনা-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচী পালন করতে শুরু করে৷ সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স্থানীয় জেলা প্রশাসনের দায়িত্বরত ব্যক্তিবর্গের সাথে কয়েকদফা আলাপ আলোচনা হয়৷
জেলা প্রশাসক মহোদয় শিক্ষার্থীদের কাছে তিন দিনের সময় চাইলে, শিক্ষার্থীরা তা দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং শেষমেষ সর্বোচ্চ ২৪ ঘন্টা সময় দিতে সম্মতি প্রকাশ করে৷ এরই সাথে দোষীদের গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত তাদের এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়৷
এরপর জেলা প্রশাসক মহোদয় আন্দোলন স্থান পরিত্যাগ করলে সেখানে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রবেশ করে এবং প্রাথমিকভাবে তারা আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে৷ এরই পর পর তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থান ত্যাগ করার নির্দেষ দেয়। এবং তারা এই ঘোষণা দেয় যে ” যারা ছাত্রলীগ কর্মী তারা এখনই আন্দোলন স্থান ত্যাগ করবে, আর যারা আন্দোলন স্থান ত্যাগ করবে না তারা সবাই জামাত শিবির।”
তাদের এই বক্তব্যের কয়েক মিনিটের মাথায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থান ত্যাগ না করায় তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকালীন সময়ে হামলাকারীদের নিকট দা, রাম দা’সহ বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র দেখা যায়। এর ফলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পুরোপুরি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সকলকে একত্রিত করে ক্যাম্পাসের দিকে রওনা দিলে জেলা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা পুনরায় আক্রমন চালায়৷ এই আক্রমনে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ভিসি মহোদয়শ বেশ কয়েকজন শিক্ষকসহ হামলার শিকার হয়৷
এরপরে দুই আড়াই ঘন্টা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনীদের কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়৷ এসময় জেলা ছাত্রলীগের সাথে স্থানীয় জনগণও যুক্ত হয় এবং তারা মসজিদের মাইকে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার জন্য আশেপাশের সকলে শামিল হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়।
এভাবে কয়েক ঘন্টা অতিক্রম হওয়ার পর পরিবেশ কিছুটা শান্ত হলে চারদিকে এক উৎকন্ঠাজনক পরিবেশের সৃষ্টি হয়৷ পুরো ঘটনায় প্রায় অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী-শিক্ষক আহত হয়৷
জেলা প্রশাসক ও পুলিশ বাহিনী পুরোটা সময় এক নিরব ভূমিকা পালন করে৷ শিক্ষার্থীরা তাদের এক বোনের সাথে হওয়া অন্যায়ের বিচার চাইতে গিয়ে অসংখ্যজন রক্তাক্ত ও অত্যাচারিত হয়৷ এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীই এক চরম অনিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সময় পার করছে।