কথা তো ছিল কত কিছুই। পশ্চিমা বিশ্বের ক্ষমতাধরেরা কত প্রতিশ্রুতিই না দিয়েছিলেন। আর সেই প্রতিশ্রুতিতে ভরসা রেখে ন্যাটোতে যোগ দেওয়া ও আরও কত স্বপ্নই না দেখেছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে জেলেনস্কির সব স্বপ্ন এখন ভেঙে গেছে ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা আর গোলায়।
রাশিয়া যখন একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান হামলা চালাচ্ছে, গোলা ছুড়ছে, শহর দখল করছে, তখন অনেক আকুতির পরও পশ্চিমা বন্ধুদের কাউকে পাশে পাচ্ছেন না জেলেনস্কি। হামলা শুরুর পর থেকে চার দিন ধরে একের পর এক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কির কথা শুনে মনে পড়ে যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই কবিতা—‘কেউ কথা রাখেনি’।
গত বৃহস্পতিবার ভোরে রাশিয়া হামলা শুরু করে ইউক্রেনে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এ হামলায় অবশ্য অবাক হয়নি বিশ্ববাসী। কারণ, হামলার আশঙ্কা ছিল বেশ কয়েক দিন ধরেই। বারবারই ন্যাটোতে যুক্ত হতে চেয়েছে ইউক্রেন। আর সেখানেই আপত্তি ছিল রাশিয়ার। পুতিন মনে করেন, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেওয়া তাঁর দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সম্প্রসারণের বিরোধিতাও করছেন তিনি।
তবে পুতিনের এমন বিরোধিতা আমলে নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। একই সুরে কথা বলেছে ন্যাটোও। বলেছে, ন্যাটো একটি আত্মরক্ষামূলক সামরিক জোট। প্রতিটি দেশের প্রতিরক্ষার পথ বেছে নেওয়ার অধিকার আছে। আর যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর এমন আশ্বাসে আস্থা রেখে জেলেনস্কিও তাঁর দাবিতে অনড় থেকেছেন। গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ভাদিম প্রাইস্তাইকো যুদ্ধে না জড়াতে প্রয়োজনে ন্যাটোয় যোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকবে বলে জানালেও জেলেনস্কি উড়িয়ে দেন সমঝোতার সম্ভাবনা। তিনি বলেন, ন্যাটোর সদস্য পদ তার দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
আর এ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে জেলেনস্কি নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনলেন। নিজেদের নিরাপত্তার কথা বলে ইউক্রেন সীমান্তে সেনা মোতায়েন বাড়াতে শুরু করে রাশিয়া। প্রায় কয়েক লাখ সেনা মোতায়েন নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে ২১ ফেব্রুয়ারি দেশটির রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী-নিয়ন্ত্রিত দনবাসের দুটি অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। এ দুই রাষ্ট্রের নিরাপত্তার কথা বলে গত বৃহস্পতিবার বন্ধু বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোকে ফোনে সামরিক অভিযান শুরুর খবর জানান।
– প্রথম আলো