তাৎক্ষণিকভাবে (রিয়েলটাইম) ব্যবহারকারীর অবস্থানগত তথ্য সংগ্রহ করে, এমন বেশ কয়েকটি সেবা বন্ধ করে দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। এসব সেবার মধ্যে রয়েছে নিয়ারবাই ফ্রেন্ডস, ওয়েদার অ্যালার্টস, লোকেশন হিস্ট্রি, ব্যাকগ্রাউন্ড লোকেশনের মতো অবস্থানভিত্তিক সুবিধাগুলো। ফেসবুকের পক্ষ থেকে ব্যবহারকারীদের নোটিফিকেশন দিয়ে এ তথ্য জানানো হচ্ছে। প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য ভার্জকেও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা কর্তৃপক্ষ।
প্রযুক্তিবিষয়ক আরেক ওয়েবসাইট নাইনটুফাইভ ম্যাকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেটা কর্তৃপক্ষ বলছে, অবস্থানজনিত সুবিধাগুলো কম ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এর আগে যাঁরা এগুলো ব্যবহার করতেন, তাঁদের কাছে এরই মধ্যে ফেসবুকের নোটিফিকেশন পাঠানো শুরু হয়েছে। ফেসবুকের নোটিফিকেশনে বলা হয়েছে, ৩১ মে থেকে অবস্থানগত ফিচারের সঙ্গে যুক্ত তথ্য সংগ্রহ বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া আগামী ১ আগস্ট থেকে সংরক্ষিত সব তথ্য মুছে দেওয়া হবে।
ভার্জকে মেটার মুখপাত্র এমিল ভাজকুয়েজ বলেছেন, ‘ফেসবুক থেকে আমরা অবস্থানগত, তথ্যভিত্তিক কিছু সুবিধা সরিয়ে নিচ্ছি। ব্যবহারকারী কম থাকায় এসব বন্ধ হচ্ছে। তবে কীভাবে ব্যবহারকারীর অবস্থানের তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহার করা হয়, তা ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবহারকারীদের হাতে লোকেশন সার্ভিসেস সুবিধা ব্যবহারের সুযোগ থাকবে।
মেটার পক্ষ থেকে অবস্থানগত তথ্যভিত্তিক সুবিধা বন্ধ করার কথা বলা হলেও ফেসবুকের পক্ষ থেকে পুরোপুরি অবস্থানগত তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম বন্ধ করা হচ্ছে না। ফেসবুক বলছে, তারা ব্যবহারকারীদের উন্নত অভিজ্ঞতা দিতে অবস্থানভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ চালিয়ে যাবে। এতে ব্যবহারকারীকে প্রাসঙ্গিক বিজ্ঞাপন ও তথ্যনীতিমালার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ লোকেশন চেক–ইন দিতে সাহায্য করবে।
সেটিংস ও গোপনীয়তা মেনু থেকে সংরক্ষিত যেকোনো অবস্থানের তথ্য দেখা, ডাউনলোড বা মুছে ফেলা যাবে। অন্যথায় ফেসবুক আগামী ১ আগস্ট থেকে পরিষেবাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত যেকোনো সঞ্চিত তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে ফেলবে।
ফেসবুকের পক্ষ থেকে ২০১৪ সালে নিয়ারবাই ফ্রেন্ডস সেবাটি চালু করা হয়। এর মাধ্যমে ফেসবুক অ্যাপ থেকে রিয়েলটাইমে যেকেউ তাঁর অবস্থানের তথ্য বন্ধুদের জানাতে পারতেন। এতে কাছাকাছি বন্ধুদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করার সুযোগ মিলত। তবে স্ন্যাপচ্যাটের স্ন্যাপ ম্যাপ, অ্যাপলের ফাইন্ড মাই ফ্রেন্ডসের মতো সেবাগুলোর জনপ্রিয়তার কারণে ফেসবুকের এ সেবা জনপ্রিয়তা হারায়।
ফেসবুকের বিরুদ্ধে অবশ্য ব্যবহারকারীর তথ্য সংরক্ষণের বিষয়ে সমালোচনাও সৃষ্টি হয়েছে। তাই অনেকেই ফেসবুকের অবস্থানগত এসব ফিচার থেকে মুক্তি পেতে চান। ২০১৯ সালে ফেসবুকের বিরুদ্ধে ব্যবহারকারীর তথ্যের ওপর ব্যাপক নজরদারির বিষয়টি সামনে আসে। এ নিয়ে সমালোচনা তৈরি হলে অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্ম থেকে ব্যাকগ্রাউন্ড লোকেশন ট্র্যাকিং–সুবিধা বন্ধ করার সুবিধা চালু করে ফেসবুক।
ফেসবুক তাদের বার্তায় জানিয়েছে, ব্যবহারকারীরা দীর্ঘদিন ধরেই নিয়ারবাই ফ্রেন্ডস, ওয়েদার অ্যালার্টস, লোকেশন হিস্ট্রি, ব্যাকগ্রাউন্ড লোকেশনের মতো ফিচার ব্যবহার করে আসছেন। এসব সেবা ৩১ মের পর আর চালু থাকছে না। আগে থেকে চালু করে রাখলেও ৩১ মের পর থেকে লোকেশন হিস্ট্রি ও ব্যাকগ্রাউন্ড লোকেশনের মতো ফিচারগুলো তথ্য সংগ্রহ বন্ধ করে দেবে। তবে তথ্যনীতিমালা অনুযায়ী অন্য অভিজ্ঞতা দিতে অবস্থানগত তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত রাখবে ফেসবুক।
সেটিংস হালনাগাদ করুন
আপনার বর্তমান লোকেশন হিস্ট্রি ও ব্যাকগ্রাউন্ড লোকেশন সেটিংসের বিষয়টি ৩১ মে পর্যন্ত ফেসবুক অ্যাপ থেকে হালনাগাদ করতে পারবেন। এর পর থেকে সেটিংসের বিষয়টি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। এটি হালনাগাদ করার সুযোগ পাবেন না।
লোকেশন হিস্ট্রি ডাউনলোড করার সুযোগ
আপনি যদি আপনার বর্তমান লোকেশন হিস্ট্রি দেখতে চান বা মুছে ফেলতে চান, তবে তা ১ আগস্টের আগেই সেখানে যেতে হবে বা ডাউনলোড করে নিতে হবে। ১ আগস্টের আগপর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা না নিলে আপনার লোকেশন হিস্ট্রি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যাবে।
– দ্য ভার্জ অবলম্বনে