ক্যাম্পাসে যেকোনো ধরণের মিছিল-মিটিং এবং রাত সাড়ে ১০টার পর অবস্থানে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের বহিস্কৃত কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দৌরত্ম শুরু হয়েছে।
ফলে নতুন করে অস্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে জবি ক্যাম্পাসে।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদত্যাগ করলে রাত ১০.৪৫ এ ক্যাম্পাসে এবং এর আশে পাশের এলাকায় নিজ অনুসারীদের নিয়ে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে শাখা ছাত্রলীগের বহিস্কৃত কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলামের ও সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেল। ক্যাম্পাসের মুল ফটক থেকে মিছিল নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে হয়ে দ্বিতীয় গেট দিয়ে আবার প্রধান ফটকে এসে শেষ হয়।
এদিকে গত ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে অনাকাঙিক্ষত ঘটনা এড়াতে ১০.৩০ এর পর ক্যাম্পাসে সকল ধরণের অবস্থান নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপরও শনিবার ১০.৩০ এর পর দফায় দফায় অনুসারীদের নিয়ে শোডাউন করেছে তরিকুল-রাসেল। বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপার।
গত ফেব্রুয়ারিতে প্রেমজনিত সংঘর্ষের জেরে বিলুপ্ত হয় তরিকুল রাসেল কমিটি। সেসময় সপ্তাহ জুড়ে দফায় দফায় সংঘর্ষে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে সদরঘাট এলাকা। গুরুতর আহত হয় ৪ সাংবাদিক, সহকারী প্রক্টর সহ অন্তত ৫৭ জন। এছাড়া জবি তরিকুল-রাসেলের অনুসারীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, ইভ-টিজিং-এর অভিযোগ ছিলো নিত্য ঘটনা। নতুন করে ক্যাম্পাসে শোডাউন দেওয়ায় তরিকুল-রাসেলের অনুসারীরা আবার মাথাচাড়া দিতে পারে বলে মনে করছে শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান নেতাকর্মীরা।
১০.৩০ এর পর বহিরাগত কাউকে ক্যাম্পাসে পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রক্টরিয়াল বডি থেকে বারবার বলা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় প্রক্টরিয়াল বডির কোনো সতর্কতা চোখে পড়েনি বরঞ্চ কারা মিছিল করেছে সেটাই জানে না তারা।
তরিকুল-রাসেলের শোডাউনে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষুব্ধ পতিক্রিয়া দেখা গেছে নেতাকর্মীদের। ইমরান খন্দকার ইমু নামে ছাত্রলীগের এক কর্মী লিখেছেন, যেখানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের পদ থেকে অব্যহতি দিলে যুবলীগ/আওয়ামী লীগের নেতারা আনন্দে মিছিল করে সেখানে আর যাই হোক সুষ্ঠ রাজনীতি নেই।
ক্যাম্পাসে মিছিল ও মিষ্টিবিতরণ নিয়ে জানতে চাইলে নিজেদের এখনও ছাত্রলীগ হিসেবে দাবি করছেন শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল, যদিও কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলাম ইতোমধ্যে বিবাহ করেছেন। জয়নুল আবেদিন রাসেল বলেন, নেত্রীর সিদ্ধান্ত যাতে বাস্তবায়ন হয় তাই আমরা মিছিল করেছি।
সাবেক নেতা হয়ে মিছিলের যৌক্তিকতা কতটকু জানতে চাইলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, সাবেক নেতা তাই বলে ক্যাম্পাসে যাওয়া কি নিষেধ?
প্রক্টর অফিসকে জানিয়ে মিছিল করেছেন কি জানতে চাইলে বলেন, ছাত্রলীগ তো কাউকে জানিয়ে মিছিল করবে না। সাবেক সভাপতি এবং সদ্য বিবাহিত মো. তরিকুল ইসলাম নিজে বিয়ে করেছেন স্বীকার করে বলেন, নেত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল ও মিষ্টি খেয়েছি। এটা কি অন্যায়? ক্যাম্পাসে কোন ধরণের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হলে এর দ্বায়ভার আপনারা নিবেন কিনা জানতে চাইলে উল্টো এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, যদি কোন অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয় তবে তুমিই দায়ী।
জবি ছাত্রলীগের এমন অপতৎপরতা বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একমাত্র অভিভাবক জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার যেকোনো সিদ্ধান্ত আমরা মাথা পেতে নিবো। শোভন-রাব্বানী আমাদের আন্দোলনের ফসল ছিল। আমরা দীর্ঘদিন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে এই নেতৃত্ব এনেছিলাম। তারা (তরিকুল-রাসেল) আমাদের সংগঠন করতো। আমি বলবো সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে। কেউ যেন অপতৎপরতা না করে।
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও মিছিলের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী প্রক্টর আরিফুল আবেদের বলেন, আমরা খবর পাওয়া মাত্র কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমরা সতর্ক ছিলাম। কাল আমরা প্রক্টরিয়াল বডি বসে দেখবো কারা ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে।